জননীতি বিশ্লেষণ

প্রশ্ন: লালফিতার দৌরাত্ম্য বলতে কি বুঝ?

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

উত্তর : ভূমিকা : লালফিতা প্রত্যয়টি সপ্তদশ শতাব্দীতে । ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম ব্যবহৃত হয়। সে সময়ের সরকারি দপ্তরের – দলিলপত্র লাল রংয়ের ফিতা দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। লালফিতার দৌরাত্ম্য বলতে দাপ্তরিক কাজের দীর্ঘসূত্রিতাকেই বুঝায় । উনবিংশ শতাব্দিতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

লালফিতার দৌরাত্ম্য : আমলাতন্ত্রে সিদ্ধান্ত প্রণয়ন কার্য- সমাধা ও কার্য হস্তান্তর ইত্যাদি বিষয়গুলো বেশ কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এসব প্রক্রিয়ায় অনেক সময় নষ্ট হয়। তাছাড়া আমলাদের মধ্যে সবসময় একটা নেতিবাচক মনোভাব লক্ষ করা যায়। আমলাগণ জনগণের যেকোনো কাজে প্রথমে না শব্দ উচ্চারণ করে। তারা নিজেদের সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মনে করে অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অহেতুক দেরি করে। আমলাদের কাজের এ দীর্ঘসূত্রিতাকেই মূলত লালফিতার দৌরাত্ম্য বলা হয়।

লালফিতার দৌরাত্ম্যের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য : নিম্নে লালফিতার দৌরাত্ম্যের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো-

১. নেতিবাচক অনুভূতি : লালফিতাকে সচরাচর পদ্ধতি নিয়ম এবং বিধি বিধান এসব শব্দের সমার্থক বলে মনে করা হয়। জনগণের অধিকার ব্যাহত করে এবং বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

২. দীর্ঘসূত্রিতামূলক ব্যবস্থা : লালফিতা দ্বারা দলিলপত্র টেবিলে পর্যায়ক্রমে পড়ে থাকে। নিচ থেকে উপরে যেতে অনেক সময় লাগে এবং ঘুষ-উৎকোচ এর মাধ্যমে এর বিলম্ব হয়। একে অনেকে প্রশাসনিক পীড়া বলে অভিহিত করেছেন।

৩. সময়ের সাথে অনুপযোগী : তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান এর জন্য লালফিতার জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয় না। দ্রুত সিদ্ধান্ত ও অ্যাকশন নেওয়া না গেলে সমাজে উদ্ভূত সমস্যার সমধান হয় না।

৪. সেবামূলক উদ্দেশ্য ব্যাহত করে : ম্যাক্স ওয়েবারের আমলাতন্ত্র জনগণের প্রতি অত্যধিক যুক্তিপ্রবণ ও নীতি নির্ধারক ও আবেগবর্জিত সেবা প্রদান আমলাদের উৎসাহিত করে। লালফিতার দৌরাত্ম্য অধিকাংশ সময় জনগণের সেবামূলক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত করে থাকে।

৫. অধিক বিধি-বিধান যুক্ত: লালফিতার ফলে সংগঠনে বিধি বিধান সীমা অতিক্রম করে জনগণের কল্যাণে কাজ না করে বরং ক্ষতি করে। তখন এসব বিধি বিধান লালফিতার দৌরাত্ম্য বলে সমীচীন হয়।

৬. ঘুষ ও দুর্নীতির উৎস : কিছু সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধবিজ্ঞানী একে ঘুষ ও দুর্নীতির উৎস বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন। কাজ আটকে থাকে বলে মানুষের মধ্যে ঘুষের প্রবণতা বৃদ্ধি করে।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, লাল ফিতার দৌরাত্মা প্রশাসনিক ব্যবস্থায় জটিলতা ও পীড়াদায়ক। জন প্রতিনিধিত্বের সদিচ্ছা থাকতে হবে এসব প্রভাব খর্ব করে, লাল ফিতার প্রভাবকে অতিক্রম করে জনগণের আশু প্রয়োজন মেটানো এবং আমাদের কাজ দ্রুত করা।

প্রশ্ন : নীতি পরিগ্রহণ প্রক্রিয়া বা ‘ফিডব্যাক’ সম্পর্কে লিখ।

উত্তর : ভূমিকা : নীতি প্রণয়নের কাজটি বেশ জটিল। তাই নীতি প্রণয়ন থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রক্রিয়াগুলো কোনো একজন ব্যক্তি বা সংস্থার মাধ্যমে সম্পন্ন হতে পারে না। তাই কার্যকর নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থার ভূমিকার প্রয়োজন পড়ে। তবে এসব ব্যক্তি কিংবা সংস্থার ভূমিকার ক্ষেত্রে কিছুটা তারতম্য পরিলক্ষিত হয়।

ফিডব্যাক : জননীতিক ব্যবস্থা হচ্ছে একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ফলাবর্তন প্রক্রিয়ার (Feedback process) মাধ্যমে এটি চলমান থাকে। ফলাবর্তন বা ফিডব্যাক হচ্ছে যোগাযোগের এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জননীতিক ব্যবস্থার আউটপুট পরিবেশে কী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। প্রভাব বিস্তার করে বা পরিবর্তনের সূচনা করে তা ইনপুট আকারে জননীতিক ব্যবস্থায় ফিরে আসে। জননীতিক সিদ্ধান্তের ফলাফল ও ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তের মধ্যে ভারসাম্য বিধানে এটিই একমাত্র প্রক্রিয়া।

ফিশার (John R. Fisher)-এর মতে, “জননীতিক ব্যবস্থার ইনপুটের চাহিদার (Demand) সুযোগ সঙ্গতি রেখে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সিদ্ধান্তকে বলা হয় আউটপুট। ইনপুট আউটপুট রূপান্তরিত হয়ে পরিবেশে প্রবেশ করলে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সেই প্রতিক্রিয়া থেকে সৃষ্টি হয় আবার নতুন ইনপুটের। এরূপ আবর্তন প্রক্রিয়াই হচ্ছে ফিডব্যাক বা ফলাবর্তন।”

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, জননীতিক ব্যবস্থা স্থায়িত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে ফলাবর্তন প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অনস্বীকার্য এর সাহায্যে কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্তের প্রতি জনগণের প্রতিক্রিয়া, সমর্থন এবং সংকটের যাত্রা জোনে তার আলোকে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে ।

Read More

বিঃদ্রঃ রাষ্ট্র বিঙ্গান বিভাগ (জননীতি বিশ্লেষণ) সম্পর্কিত আরও পোষ্ট পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ

Share This